Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
শ্রীপুরের মাল্টার বাগান যেন এক খণ্ড মিশর
বিস্তারিত

গাজীপুরের শ্রীপুরে মাল্টার চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মতিউর রহমান। তার মাল্টা বাগানের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে শুধুই গাছভর্তি হলুদ রসালো মাল্টা আর মাল্টা। কোথাও কোথাও ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে হলুদ বর্ণের মাল্টা মিলেমিশে সব একাকার হয়ে গেছে। কোথাও আবার সবুজ বর্ণের পাতার ভেতর থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখা যাচ্ছে হলুদ বর্ণের পাকা মিশরীয় হলুদ মাল্টা। মতিউরের বাওয়ানী মাল্টা বাগান দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল লক্ষণীয়।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের ডালে শহর গ্রামে মতিউর রহমান প্রায় সোয়া দুই একর বা ২২২ শতাংশ জায়গাজুড়ে মাল্টার বাগান করেছেন। তার বাগানে রয়েছে মিশরীয় হলুদ মাল্টা, দার্জিলিং কমলা এবং চায়না জাতের কমলা। দর্শনার্থীরা নিজ হাতে মাল্টা ছিঁড়ে রসালো এবং সুমিষ্ট মাল্টার স্বাদ নিচ্ছেন। মিশরীয় জাতের ৫শ’ মাল্টা, ৩০টি দার্জিলিং কমলা এবং ৩০টি চায়না কমলা গাছ থেকে ফলন পেয়ে খুব খুশি মাল্টা চাষি মতিউর রহমান। তার বাগান বাওয়ানী অ্যাগ্রো থেকেই সরাসরি পছন্দ করে মাল্টা কিনতে পারছেন দর্শনার্থীরা। দামও সাধ্যের মধ্যে রেখেছেন।

মিশরীয় জাতের হলুদ সবুজ বর্ণের মাল্টা থোকায় থোকায় ঝুলে গাছের ডালপালা নুইয়ে দিয়েছে। দর্শনার্থীরা বাগানে প্রবেশ করে গাছ থেকে নিজ হাতে মাল্টা ছিঁড়ে খাচ্ছেন এবং বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজ দেশে নিজ হাতে মাল্টা ছিঁড়ে খাওয়াটা নিজেদের কাছে স্বপ্নের মতো বলে মনে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আগত দর্শনার্থীরা।

চাষের দ্বিতীয় বছরেই ফলন আসা শুরু হয় মিশরীয় মাল্টার। অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক কম পরিশ্রমেই মাল্টা লাভজনক চাষ বলে জানিয়েছেন মতিউর। ক্রেতারা নিজ হাতে মাল্টা ছিঁড়ে ওজনে পরিমাপ করে নিয়ে যাচ্ছেন। সারাদিন তার মাল্টা বাগানে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। আবার দর্শনার্থীরাই হলেন মাল্টার ক্রেতা। প্রতিটি গাছে গড়ে ২০-২৫ কেজি মাল্টার উৎপাদন হয়েছে, প্রতি কেজি তিনি ২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।

 

গাজীপুর মেম্বারবাড়ি থেকে আগত উমর ফারুক বলেন, ফেসবুকে মাল্টা বাগান দেখে ঘুরতে এসেছি। এত সুন্দর ফলন হয়েছে যে, আমি দেখে অভিভূত হয়েছি। নিজ হাতে মাল্টা পেরে বাগানে বসে খেতে পারছি এবং পরিবারের জন্য নিয়ে যেতে পারছি, এ যেন নিজের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। 

দর্শনার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, ফেসবুকে কমলার বাগানের খবর পেয়ে পরিবার নিয়ে দেখতে এসেছি। দেখে খুব ভালো লেগেছে, বাচ্চারাও মাল্টা বাগান দেখে খুব উচ্ছ্বসিত। আমাদের দেশে এত সুন্দর মাল্টা বাগান হচ্ছে এটি আমাদের দেশের জন্য, কৃষির জন্য ব্যাপক সাফল্য।

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা শামসুন্নাহার রুমা বলেন, আমি জীবনের প্রথম মাল্টা বাগানে আসছি। দেশের মাটিতে নিজ হাতে ফরমালিন মুক্ত মাল্টা ছিঁড়ে খেতে পারবো এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। আজ বাগানের গাছকে থে ছিঁড়ে মাল্টা খেতে পেরে আনন্দ পাচ্ছি। 

গাজীপুর থেকে আসা রাসেল বলেন, আমি এই মাল্টা বাগানে এসে অভিভূত এবং অনেক আনন্দিত। সত্যি বলতে আমি কল্পনাও করিনি আমাদের দেশে এতো সুন্দর একটি বাগান হবে। 

বাওয়ানী এগ্রোর কর্ণধার উদ্যোক্তা মতিউর রহমান পেশায় একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি কৃষিতে আসার পেছনের গল্প বলতে গিয়ে বলেন, করোনাকালীন সময়ে যখন বেকার হয়ে পড়ি তখন ফেসবুক এবং ইউটিউবে মাল্টা এবং কমলার বাগান দেখে উৎসাহ বোধ করি চাষ করার জন্য। সেই উৎসাহ থেকে মাল্টা এবং কমলার বাগান করার ইচ্ছে জাগে। প্রথমবারে বারি জাতের মাল্টা দিয়ে শুরু করি কিন্তু আশাতীত ফলন না পেয়ে এই মিশরীয় হলুদ মাল্টার চাষ শুরু করি। ১০ বছরের জন্য ২২২ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে শুরু করি এই মাল্টা এবং কমলার বাগান। এখন পর্যন্ত ৫শ মাল্টা গাছ এবং ৩০টা দার্জিলিং কমলা ও ৩০টা চায়না কমলার গাছে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টাকা। আশা করছি, এ বছর প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারব। 

তিনি আরো জানান, গত বছর কিছু ফলন হয়েছিল। তবে এ বছর ফলন খুব ভালো হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এর চেয়ে তিন গুণ বেশি ফলন হবে। প্রতিটি গাছে কমপক্ষে ২০-২৫ কেজি পরিমাণ মাল্টা এসেছে। ৩-৪টাই এক কেজি ওজন হচ্ছে মাল্টার। ২৫০ টাকা কেজি দরে মাল্টা বিক্রি করেছি। ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে দেশের বাইরে থেকে আনা মাল্টার যে গুণগত মান তা থেকে আমাদের দেশের মাল্টার গুণগত মানে সেরা হবে। আমি দেশের যুবক ভাইদের একটা কথা বলতে চাই চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিতে উৎসাহী হন এবং দেশকে সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তুলুন।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, শ্রীপুরের মাটি মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী। শ্রীপুরের ডালে শহর এলাকার মতিউরের মাল্টার সাইজ এবং স্বাদ অসাধারণ। মিশরীয় জাতের এ মাল্টাগুলো আমাদের দেশের প্রচলিত মাল্টার চেয়ে বেশি রসালো। অথচ কয়েক বছর আগেও ধারণা ছিল না আমাদের দেশে গাছ থেকে মাল্টা ছিঁড়ে খেতে পারব।

মাঠপর্যায়ে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বেশ ভূমিকা রেখেছেন। মতিউরকে ধন্যবাদ জানাই কৃষিতে এমন সফলতার জন্য। আমি আশা করি মতিউরকে দেখে দেশে আরও উদ্যোক্তা তৈরি হবে। আমি বেকার যুবকদের বলব চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিতে মনোনিবেশ করলে ভালো সফলতা আসবে। কৃষিতে যুবকরা এগিয়ে আসলে আমাদের দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারব।

ছবি
ডাউনলোড
প্রকাশের তারিখ
22/12/2024
আর্কাইভ তারিখ
22/12/2024